ভারতের রাজধানী দিল্লির অদূরে হরিয়ানার রোহটাক জেলায় ২৩ বছর বয়সী এক যুবতীকে এমন নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে, যা বছর পাঁচেক আগের ‘নির্ভয়া’র ধর্ষণ তথা হত্যাকান্ডের ভয়াবহতাকেও হার মানাচ্ছে।
ওই মেয়েটিকে অপহরণ করে প্রথমে ড্রাগ খাইয়ে অচেতন করে ফেলা হয়। তারপর একাধিক ব্যক্তি মিলে তাকে গণধর্ষণ করে।
মেয়েটি যখন বলে সে পুলিশে অভিযোগ জানাবে, তখন ইঁট দিয়ে মেরে তার মাথা ও মুখ থেঁতলে দেওয়া হয় যাতে মৃতদেহটি কেউ শনাক্ত করতে না-পারে।
এতেই শেষ নয়, ধর্ষণকারীরা দেহটি তাদের গাড়ি দিয়েও পিষে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। তারপর সেটিকে ফেলে যায় গ্রামের একটি পরিত্যক্ত জায়গায়।
চারদিন ধরে দেহটি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ওভাবেই পড়ে ছিল। তারপর যখন গ্রামবাসীদের কারও সেটি চোখে পড়ে, ততদিনে রাস্তার কুকুররা তার মাথার ও শরীরের নানা অংশ খুবলে খেয়ে নিয়েছে।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা দেখতে পেয়েছেন, তার যৌনাঙ্গও ছিল ছিন্নভিন্ন। রোহটাক মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান এস কে ধাত্তরওয়াল জানান তার যৌনাঙ্গের ভেতর দিয়ে বাইরের কোনও ধাতব জিনিস প্রবেশ করানো হয়েছিল।
এই ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে হরিয়ানার পুলিশ এখনও পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করেছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আরও ছজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছেন রোহটাকের পুলিশ-প্রধান অশ্বিন শেনভি।
ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা জানিয়েছেন, যখন তারা মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পান তখন সেটি দিল্লিতে ‘নির্ভয়া’ নামে পরিচিত মেয়েটির দেহের চেয়েও আরও অনেক খারাপ অবস্থায় ছিল।

দিল্লির নির্ভয়া নামে পরিচিত মেয়েটির মা তার কন্যার ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদন্ড দাবি করে এসেছেন আগাগোড়াই
আর তার মা বলছেন, মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই যখন সুপ্রিম কোর্ট নির্ভয়ার হত্যা ও ধর্ষণে অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজা দেয় তখন গ্রামে সবাই বলাবলি করছিল এরপর লোকে ধর্ষণ করতে যাওয়ার আগে দুবার ভাববে।
“কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে মানুষ আসলে কতটা বেপরোয়া – আর মেয়েরা এখনও কত বড় বিপদের সামনে”, হরিয়ানার গ্রামে নিজের এক কামরার ছোট্ট ঘরের মেঝেতে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন তিনি।
ধৃতদের মধ্যে একজনের নাম সুমিত। সে ওই মেয়েটিকে ভালবাসত বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে, কিন্তু মেয়েটি বিয়েতে রাজি না-হওয়াতেই সে তাকে অপহরণ ও ধর্ষণের পরিকল্পনা করে বলে বলেছে।
ভারতের রাজধানী থেকে মাত্র ২৭ মাইল দূরে সোনপটের গ্রামে এই ভয়াবহ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই শিউড়ে উঠেছেন – কিন্তু নির্ভয়া কান্ডের পর যেমন দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় দেখা গিয়েছিল এখনও এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
হরিয়ানা পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মহম্মদ আকিল জানিয়েছেন, এই মামলার দ্রুত তদন্তের জন্য তারা একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা ‘সিট’ গঠন করেছেন।